সপ্তাহে প্রতিদিন ভোরে রেডি ফিড এবং সন্ধ্যায় ২ দিন সয়াবিন, ৩ দিন ডাবরি ডাল,ও ২ দিন ভুট্টা/গম সকালে ভিজিয়ে সন্ধ্যায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে রেডি ফিড ভিন্ন অন্য খাবার ব্যবহার না করাই ভালো। বাণিজ্যিকভাবে ও বড় আয়তনের গলদা চাষের ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত ভালো কোম্পানির রেডি চিংড়ির ফিড ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
ছটকা চিংড়ি পুকুরে মজুদ করার পর চিংড়ির ওজনের ৩-৫% খাদ্য সন্ধ্যায় ও ভোর রাতে প্রয়োগ করতে হবে। মোট খাবারকে ৪ ভাগ করে, এর ৩ ভাগ সন্ধ্যায় ও ১ ভাগ ভোর রাতে প্রয়োগ করতে হবে। শতকে ২০০ গ্রাম ডিএপি স্যার গুলে ছিটিয়ে দিলে খোলস বদলানোর জন্য সুবিধা হয়। খাবার খেলো কি-না তা পরীক্ষার জন্য সপ্তাহে ১ দিন ট্রেতে খাবার দিতে হবে। ৩-৪ ঘণ্টা পর ট্রে তুলে দেখতে হবে ট্রে-তে খাবার অবশিষ্ট আছে কিনা।
চিংড়ি ২.৫-৩ ইঞ্চি সাইজের হলে স্ত্রী চিংড়ি আলাদা করে শুধু পুরুষ চিংড়ি চাষে দিলে লাভ ফলন আশা করা যায়। তাছাড়া পুরুষ চিংড়ি জৈবিক কারণে স্ত্রীর প্রতি আসক্ত থাকায় স্বাস্থ্যহানি ঘটে। এরেটর না থাকলে মিশ্র চাষে শতকে ৮০ পিছ ছটকা এবং এরেটর থাকলে ১৫০ পিছ বা তারও বেশি ছটকা মজুদ করা যায়। আলাদা পুকুরে পি এল নার্সিং করে কালচার পুকুরে চাষ করতে পারলে বছরে ২ বার চিংড়ি হারভেস্ট করা সম্ভব।
গলদা চিংড়ির পরিচর্যা
চাষ কালীন সময়ে শতকে ২০ দিন পর পর ১৫০-২০০ গ্রাম হারে জিওলাইট দেওয়া ভালো। এছাড়া, প্রতিমাসে শতকে ২৫০ গ্রাম লবণ দিতে হবে। খোলস বদলানোর পর চিংড়ি মাছ খুবই দুর্বল ও নাজুক হয়ে পড়ে। চিংড়ি স্বভোজী স্বভাবের হওয়ায় এ সময়ে সবল চিংড়ি দুর্বল গুলিকে খেয়ে ফেলতে পারে।
খাবার সংকট থাকলে এই খেয়ে ফেলার প্রবণতা বেশি হয়। তাই, কালচার পুকুরে বাঁশের চোঙ্গ, ১.৫-২ ইঞ্চি ডায়া বিশিষ্ট প্লাস্টিকের পাইপ, মাটির হাড়ি ইত্যাদি ফেলে রাখলে খোলস বদলানোর পর দুর্বল চিংড়ি সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে। পুরুষ গলদা চিংড়ির পা আকারে বড় হয় এবং অন্য চিংড়িকে সাড়াশি বা চিমটা দ্বারা আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
প্রতি ১৫ দিন পর চিংড়ির পুকুরে জাল টেনে চিংড়ি তুলে পা ভেঙে দিতে হয়। পা ভেঙে দেয়ার ফলে অন্য চিংড়ি আক্রমণ বা খাওয়া থেকে রক্ষা পায় এবং চিংড়ির বৃদ্ধি বেশি হয়। পা নাড়ানোর জন্য দেহের প্রায় ১৫-২০% শক্তি ব্যয় হয়। চিংড়ি মাছ অক্সিজেন এর প্রতি বেশি সংবেদনশীল। গভীর রাতে পুকুরের পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরীক্ষা করতে হবে।
চিংড়ির পুকুরে দ্রবীভূত অক্সিজেন এর মাত্রা কমপক্ষে ৫ মি.গ্রা./লিটার মেন্টেন করতে হবে। পানিতে অক্সিজেন এর মাত্রা কম হলে বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে এবং পুকুর পাড় নিচু হলে চিংড়ি হেঁটে পুকুরের বাইরে চলে যেতে পারে।
এছাড়া, বাইরে থেকে সাপ, ব্যাঙ, কুচিয়া ইত্যাদি পুকুরে প্রবেশ করে চিংড়ি খেয়ে ফেলতে পারে। তাই, নিরাপত্তার জন্য পারের চারদিকে পানির কাছাকাছি নেট স্থাপন করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন পর পর চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে খাবারের পরিমাণ পুন:নির্ধারণ করতে হবে।