প্রোটিনাস

গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি

আমাদের দেশে গলদা চিংড়ির সাধারণত ২টি পদ্ধতিতে চাষিরা চাষ করে থাকেন:

১। একক চাষ পদ্ধতি: ২। মিশ্রিত চাষ পদ্ধতি:

একক চাষ পদ্ধতি:

শুধুমাত্র গলদা চিংড়ির একক চাষ। একক চাষ পদ্ধতিতে স্বাভাবিক ভাবে প্রতি শতকে ১০০-১১০ টি গলদা পোনা মজুদ করা যায় এ রেশন সহ ক্লিন সিস্টেম এর ব্যাবস্থা করতে পারলে শতকে ২০০-৩০০ পোনা মজুদ করা যেতে পারে। একক চাষ পদ্ধতিতে প্রতি একরে  উৎপাদন ৪০০-৫০০ কেজি হয়ে থাকে।

মিশ্রিত চাষ পদ্ধতি:

এ পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ির সাথে রুই, কাতলা, সিলভার কাপ, বিগহেড জাতীয় মাছের চাষ করা হয়। মিশ্রিত চাষ পদ্ধতিতে প্রতি শতকে ৭০-৮০ টি গলদা চিংড়ি এবং ৩-৪ টি কার্প জাতীয় মাছের পোনা মজুদ করা হয়। যেহেতু চিংড়ি অনেক দামি মাছ এবং এদের খাদ্য অনেক দামী তাই এর সাথে এমন মাছ মিশ্র কালচার দেয়া ভালো যে গুলির বাজার মূল্য বেশি। এক্ষেত্রে ৪০০-৫০০ গ্রাম আকারে রুই ও কাতলা মাছ দেওয়া ভালো। এগুলো চিংড়ি সংগ্রহ কালীন সময় প্রায় ৩-৩.৫ কেজি আকারে হবে। মিশ্রিত চাষে এমন কোন মাছ চিংড়ির সাথে দেওয়া যাবে না যেগুলি চিংড়ি মাছকে খেয়ে ফেলবে এবং যেগুলির বাজার মূল্য কম। উৎপাদন প্রতি একরে চিংড়ি ২০০-৩০০ কেজি এবং কার্প জাতীয় মাছ ২০০০-২৫০০ কেজি হয়ে থাকে।

গলদা চিংড়ির রেণু পোনা প্রাপ্তি:

প্রাকৃতিক উৎস হিসাবে নদী এবং সাগরের মোহনা থেকে গলদার সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া, হ্যাচারিতে উৎপাদিত গলদার রেনু ও পাওয়া যায়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রথম রেনু পাওয়া যায় এবং বছরের শেষ দিক সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত গলদা রেনু পাওয়া যায়। আমার ধারণা মতে প্রাকৃতিক উৎস হতে প্রাপ্ত চিংড়ির রেণু গুণগত মান ভালো।

চিংড়ির পি এল পোস্ট লার্ভা নার্সিং:

সিজনের শুরুতে অর্থাৎ বৈশাখ মাসের শুরুতে পি এল ছাড়তে হবে। এরপর যতদিন দেরি হবে, স্ত্রী চিংড়ির সংখ্যা বেশি ও পুরুষের সংখ্যা কম হবে। স্ত্রীর চিংড়ি আকারে ছোট হওয়ায় ফলন কম হয়। পিএল ছাড়ার প্রথম ২০-২৫ দিন পাউডার ফিট দিতে হবে। প্রথমে প্রতি ১০০০ পি এল এর জন্য ১০ গ্রাম করে পাউডার ফিড দেওয়া যেতে পারে। ক্রমান্বয়ে পাউডার এর পরিমান বাড়াতে হবে। এরপর ক্ষুদ্র আকারে পিলেট ফিড দেয়া শুরু করতে হবে।

প্রথম অবস্থায় চিংড়ি খাবারের ৩০-৪০% প্রোটিন থাকা আবশ্যক‌ বড় চিংড়ি এর জন্য খাদ্য ২৮-৩০% প্রোটিন থাকতে হবে। চিংড়ির রেণু পি এলের বেঁচে থাকার হার সাধারণত ৭০-৮০%। প্রতিকূল পরিবেশে এই বেঁচে থাকার হার অনেক কমও হতে পারে। এজন্য চিংড়ির পি এল নার্সিং পুকুর বড় করে প্রায় ২.৫-৩ ইঞ্চি কালচার পুকুরের দেওয়া হলে মৃত্যু হয় না বলেই চলে যদি অন্যান্য পরিচর্যা ঠিক থাকে‌।

চিংড়িকে সাধারণত ডুবন্ত খাবার দেওয়া হয়ে থাকে। কোন কারনে কালচার পুকুরের অধিকাংশ চিংড়ি মারা গেলে এবং নিয়মিত প্রাথমিক মজুদ ঘনত্ব বিবেচনা করে খাবার দেওয়া হলে, একদিকে যেমন খাবারের অপচয় হবে, অন্যদিকে অব্যবহৃত খাদ্য পৌঁছে গিয়ে পুকুরের পানি নষ্ট হবে। ‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *